ঠিকাদার আর ক্লায়েন্টের গল্প
ক্লায়েন্ট - এই কাজটি করতে কত খরচ হবে?
ঠিকাদার - ২৮০০ ডলার।
ক্লায়েন্ট - ওরে বাবা! এই সামান্য কাজের জন্য এত টাকা?
ঠিকাদার - এই কাজের জন্য, কত খরচ হবে বলে আপনি মনে করেন?
ক্লায়েন্ট - আরে ভাই এটা সহজ কাজ, সর্বোচ্চ ৮০০ ডলার খরচ করতে পারি।
ঠিকাদার - দুঃখিত! আমি এত অল্প টাকায় কাজটা করতে পারছি না।
ক্লায়েন্ট - ভাই, এই লাইনের আপনাদের এই একটা সমস্যা, অল্প কাজ করে, অনেক বেশি লাভ করতে চান!
ঠিকাদার - আমাদের সম্পর্কে আপনার এই ধারনা শুনে মনে কস্ট পেলাম। আচ্ছা কাজটা তাহলে আপনি নিজে কেন করছেন না? অনেক খরচ বাঁচাতে পারতেন।
ক্লায়েন্ট - কিন্তু, কিন্তু, আমিত জানি না যে, কীভাবে এটি করতে হবে।
ঠিকাদার - কোন সমস্যা নেই, আপনি আমাকে ৯০০ ডলার দেন, আমি কাজটি কিভাবে করতে হয়, তা খুব ভালভাবে, হাতে কলমে শিখিয়ে দেব। এর পরেও আপনি কাজটি অন্যকে দিয়ে করাতে ৮০০ ডলার খরচ করতে পারবেন। সব খরচের পরেও আপনার হাতে কিন্তু ১১০০ ডলার থাকবে। আর আমার কাছ থেকে কাজ শিখে যে অভিজ্ঞতা লাভ করবেন, সেটা আপনি পরে কাজে লাগাতে পারবেন। আপনার আর কস্ট করে কাউকে হায়ার করতে হবে না। অনেক টাকা সেভ হবে।
ক্লায়েন্ট - ওয়াও! চমৎকার আইডীয়া, আমি রাজি!
ঠিকাদার - অসাধারণ! যা হোক শুরু করার জন্য, আপনাকে কিছু যন্ত্রপাতি কিনতে হবে। আপনাকে একটু চিপিং হাতুড়ি, একটি পেরেক গাথার মেশিন, একটি লেজার, একটি ড্রিল মেশিন, একটি মিক্সার মেশিন, পিপিই এবং আরও কিছু টুকিটাকি জিনিস লাগবে।
ক্লায়েন্ট - কিন্তু, আমার কাছে এই যন্ত্রপাতির একটাও নেই। আর আমি মাত্র একটা কাজ করার জন্য কোন মতেই এত কিছু কিনতে পারি না!
ঠিকাদার - ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই, আমার কাছে এসব যন্ত্রপাতি সব আছে। আমি মাত্র ৩০০ ডলারে এসব কিছু ভাড়া দিতে রাজি আছি। এর পরেও আপনার হাতে কিন্তু ৮০০ ডলার থাকছে ।
ক্লায়েন্ট - এভাবে আমার টাকাগুলো খরচ হয়ে যাচ্ছে। যা হোক আমি আপনার যন্ত্রপাতিগুলো ভাড়া নেব, আর কাজ শিখে আমি নিজেই কাজটা করব।
ঠিকাদার - অসাধারণ! যা হোক আগামি শনিবার আপনাকে আমি শেখানো শুরু করব।
ক্লায়েন্ট - এটা কি শোনালেন ভাই? আমি শনিবার কোন মতেই পারব না। আমার আজকেই কাজটা শেষ করার দরকার।
ঠিকাদার - আমি খুবই দুঃখিত, আমি শুধুমাত্র শনিবারে অন্যদের শেখাই। আমার নিজের কাজ আগে, যন্ত্রপাতিগুলো সপ্তাহের বাকী দিনগুলোতে আমার কাজের জন্য দরকার হয়। শনিবার বন্ধের দিন শুধু ফ্রি থাকে।
ক্লায়েন্ট - আচ্ছা ভাই ঠিক আছে। শনিবার আমার ফ্যামিলি নিয়ে বেড়াবার কথা ছিল, সেটা বাদ দিচ্ছি, আমার কাজ শেখা আগে।
ঠিকাদার - ঠিক আছে, আমিও কিন্তু সেটাই করছি! শনিবার ফ্যামিলিকে সময় দিচ্ছি না।ওহো আমি ভুলে গেছি. আপনি যেহেতু নিজে নিজে কাজটি করতে যাচ্ছেন, তাই আপনাকে বেশ কিছু দরকারি হার্ডওয়ারের জিনিস দোকান থেকে কিনতে হবে। জানেনইত এসব জিনিসের আজকাল প্রচুর চাহিদা, সহজে সব কিছু এক সাথে পাওয়া যায় না। তাই সব কিছু একসাথে দ্রুত পেতে চাইলে, আপনাকে একটা ট্রাক নিয়ে শনিবার সকাল ৬টার আগেই হার্ডওয়ারে দোকানের সামনে চলে আসতে হবে।
ক্লায়েন্ট - সকাল ছয়টায়? শনিবারে? এটা আমার জন্য খুব সমস্যার হয়ে যাবে। আমি এত সকালে উঠতে পারি না আর আমার কোন ট্রাকও নেই!
ঠিকাদার - কিছু করার নেই ভাই, আপনাকে একটা ট্রাক ভাড়া করতেই হবে না হলে এত মাল কিভাবে নেবেন। আর আপনার কি কোন হেল্পার আছে? যদি না থাকে, তবে মালামাল ট্রাকে তোলার জন্য, কিছু হেল্পার ভাড়া করতে হবে।
ক্লায়েন্ট - ইয়ে মানে, আসলে ভাই আমি চিন্তা করছিলাম যে, এই কাজ ঠিকঠাক ভাবে করার জন্য আপনাকে হায়ার করলেই ভাল হয়। আমার পক্ষে এত প্যারা নেয়া সম্ভব না ভাই। কাজটা আপনিই করেন।
ঠিকাদার - ঠিক আছে, কোন সমস্যা নেই, এই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন, ৫০% টাকা এডভান্স করেন। আমি আপনার কাজ আজকে থেকে শুরু করে দিচ্ছি।
এটাই সত্য যে, একজন বায়ার আপনাকে শুধু তার একটা কাজ করার জন্যই পে করে না, সে আপনার অভিজ্ঞতা, আপনার জ্ঞান, আপনার সময়, কাজ করার টুলস, পরিবারকে সময় না দেয়ার ত্যাগ সহ অন্যান্য জিনিসের জন্যও পে করে।
কাজেই আপনার কাজের রেট কি হবে, সেটা আপনি নিজে ঠিক করবেন, অন্য কাউকে সেটা ঠিক করার সুযোগ দেবেন না।
উপরের এই শিক্ষণীয় গল্পটা অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সহ যে কোন স্বাধীন কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হতে পারে।
ধন্যবাদ!
(নাম না জানা বিদেশি লেখকের গল্পে থেকে বাংলায় অনুদিত)
Post a Comment