প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ ২
বিষয় : ইসলামি আদর্শ ও মতবাদ
পৃষ্ঠা : 225
ভার্সন: পিডিএফ
ইসলাম কখনো কারো শত্রু হতে আসেনি। আমরা প্রত্যেকে রুহ এর জগতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে যে ওয়াদা করে এসেছিলাম মানুষ কে সেই ভুলে যাওয়া ওয়াদার কথা মনে করিয়ে দিতে এসেছে ইসলাম। আর আল্লাহ আমাদের প্রকৃত শত্রু শয়তান সম্পর্কে অবহিত করার জন্য যুগে যুগে পেরন করেছেন নবী ও রাসুলগন্দের।কিন্তু আফসোস কিছু মানুষ শয়তানকে ছেড়ে ইসলামকেই নিজেদের শত্রু হিসেবে মনে করে!এর অনেক কারণ থাকলেও তার মধ্যে একটি হলো ফিতরাতির নষ্ট হিয়ে যাওয়া।
আপাদমস্তক এদেরকে যুক্তিবাদী বলে মনে হলেও কিন্তু বাস্তবে, তাদের বেশিরভাগই কেবল বিদ্বেষী। সত্য-মিথ্যার মান পরিবর্তন করা এবং তারপর ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের সাথে শত্রুতা করা- এটাই তাদের লক্ষ্য। নাস্তিকতার ছদ্মবেশে কয়েক বছর ধরে ইসলাম বিদ্বেষকে উসকে দেওয়া হচ্ছে। তবে তাদের কথার মারপ্যাঁচে পড়ে অনেক বুদ্ধিমান যুবক-যুবতী নাস্তিকতার পথ নেয়। তাদের অনেকেই সত্যের সন্ধানী।
আরিফ আজাদ সত্যের প্রতি বিনয়ী যুবকদের জন্য বাংলার মাটিতে "প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ" নিয়ে এসেছেন। বইটিতে তিনি যুক্তি ও বিজ্ঞানের আলোকে সংশয়বাদীদের সাধারণ সব প্রশ্নের উত্তর গল্প আকারে দিয়েছেন। পূর্বে, এই বইটি পাঠক সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। ছাত্র-শিক্ষক থেকে শুরু করে মানুষ ব্যাপকভাবে বইটি ক্রয় করতে শুরু করেছে এবং সন্দেহের পথ ছেড়ে ইসলামের পথে ফিরে আসেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ-২
বর্তামান সময়ে ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার কারণে মানুষের চিন্তা চেতনা আর আদর্শ খুব সহজেই পৌছে যাচ্ছে সকলের কাছে। এই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে একদল ধর্মবিদ্বেষী মানুষ ইসলাম, আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ও প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে এমন এমন সব কথা ছড়াতে থাকে, যা মুখ বুজে সহ্য যে করা কোন ঈমানদার ব্যক্তির কাছে অতন্ত্য কঠিন। কিছু অসচেতন মুসলিম ততরুণ-তরুণীদের মনে সন্দেহ সৃষ্টি করে তাদের ইসলাম থেকে বিমুখ করার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে তারা, আর সফলতা ও পেয়েছে অনেকটা। কলমের জবাব কলমে আর যুক্তির জবাব যুক্তি দিতে লেখক আরিফ আজাদ নিয়ে এসেছেন সাজিদ চরিত্রটি। তাদের কাছে পৌঁছাতে চেয়েছেন, যাদের খুব বেশি জানা শোনা নেই আমাদের ধর্ম সম্পর্কে, কিন্তু ধর্মবিদ্বেষীদের ছড়ানো এই প্রোপাগাণ্ডায় নিজের বিশ্বাস নিয়ে সন্ধেহের মধ্য পরেছেন।
লেখক এই বইটিতে নাস্তিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, এর পাশাপাশি দিয়েছেন খ্রিস্টান মিশনারিদের উত্থাপিত প্রশ্নের জবাবও, স্থান দিয়েছেন কুরআনের অলৌকিক কিছু ব্যাপার, ভাষাতাত্ত্বিক মিরাকল, যা মানুষকে সত্যিই বিস্মিত করবে, গভীর ভালোবাসা সৃষ্টি করবে কুরআনের প্রতি।
নাস্তিকরা "বনু কুরাইজা হত্যাকাণ্ড – ঘটনার পেছনের ঘটনা" - অধ্যায়ে এই হত্যা কান্ডকে কিভাবে অমানবিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে নবীজী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উপর মানবতা বিরোধী অপরাধের দোষ চাপায়, যেখানে সাজিদ তাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের শাস্তি আসলে তাদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেল অনুযায়ী হয়েছে, বেড়িয়ে আসে তার আসল ঘটনা।
তার বিপরীতে, "গল্পে জল্পে ডারউইনিজম" অধ্যায়ে উঠে এসেছে নাস্তিকতার মূল ভিত্তি ডারউইনবাদ যে বস্তুবাদীদের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বড় হত্যাযজ্ঞ গুলো চালাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
বইটিতে নারীদের সম্মান ও ইসলামে অমুসলিমদের অধিকার – ফুটিয়ে তুলেছে দুটি অধ্যায়ে।
তার সাথে রয়েছে স্যাটানিক ভার্সেস আর কুরআনের বৈপরীত্য বিষয়ে নিয়ে আলোচনার সত্যাসত্য।
আছে "ইলুমিনাতি" বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা।
"রাসূলের একাধিক বিবাহের নেপথ্যে" অধ্যায়ে
নাস্তিকদের আলোচনার মুখরোচক বিষয় নবীজী (সাঃ)-এর বহুবিবাহের পেছনে যৌক্তিক কারণ গুলো নিয়ে আলোচিত হয়েছে।
কুরআনের অলৌকিকতা ও মাহাত্ম্য প্রমাণ করেছে "সমুদ্রবিজ্ঞান" "জান্নাতেও মদ?" "কুরআন কেন আরবী ভাষায়" "পরমাণুর চেয়েও ছোট" " আর "সূর্য যাবে ডুবে" অধ্যায়গুলো। এই অধ্যায়গুলো পড়ে, আল-কুরআন যে কোন মানুষের রচনা নয় বরং তা বিশ্বজগতের স্রষ্টা মহান আল্লাহতালার বাণী, তা যে কোনো চিন্তাশীল মানুষের পক্ষেই স্পষ্টভাবে বোঝা সম্ভব। সমুদ্রের তলদেশের অন্ধকার, পরমাণুর চেয়ে ছোট ইলেক্ট্রনের অস্তিত্ব আর সূর্য যে ভবিষ্যতে আলো-তাপ হারিয়ে শ্বেতবামনে পরিণত হবে সেই তথ্য – যা বিজ্ঞানীরা বছর কয়েক আগে আবিষ্কার করলো, এগুলো সবই আল্লাহতায়ালা ১৪০০ বছর আগেই পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে বলে দিয়েছেন , যা কেবল মাত্র এগুলোর স্রষ্টার পক্ষেই জানা সম্ভব।
‘লেট দেয়ার বি লাইট’ অধ্যায়ে লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন কিভাবে প্যাগানদের দেবতা ‘মিথ্রাস’ এর জন্ম তারিখ ২৫শে ডিসেম্বর এখন হয়ে গেছে খ্রিস্টানদের ঈশ্বর যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন, আদতে যে তারিখের আশেপাশের কোনো তারিখেও যীশুর জন্ম হয় নি! খ্রিস্টান অ্যালেন এ পর্যায়ে ইতিহাসের প্রমাণ আর যুক্তিতে হেরে যাওয়া বলে, যে কারণেই হোক ক্রিসমাস ডের রিচ্যুয়াল যেহেতু চলে আসছে, তা পালন করে যাওয়াই উচিত। দাবি তোলে, মোটামুটি সকল ধর্ম নিয়ে, এমনকি ইসলামেও নাকি এরকম রিচ্যুয়াল পাওয়া যায়! নন-ইসলামিক সোর্স থেকে দাবি জানায় কাবার অস্তিত্বের ঐতিহাসিক সত্যতা প্রমাণের। সাজিদ ও তার প্রমাণ করে দেয় নন-ইসলামিক সোর্স থেকেই!
"নিউটনের ঈশ্বর" অধ্যায়টি পড়ে সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছি আমি। এখানে উঠে এসেছে বিজ্ঞানী নিউটন সম্পর্কে এমন সব তথ্য, যা ষড়যন্ত্র করে আড়ালে রাখা হয়েছিল মানুষের থেকে । একজন আগাগোড়া খ্রিস্টান হওয়া সত্যেও বিজ্ঞানী নিউটন কেনো জড়িয়েছিলেন চার্চের সাথে দ্বন্দ্বে সে, বিকৃত ক্রিশ্চিয়ানিটির বিরুদ্ধে কলমযুদ্ধ চালিয়েছিলেন, মোট ১২টি সূত্র আবিষ্কার করেছেন ঈশ্বরের অবস্থা বোঝানোর জন্য, যিশু খ্রিস্ট তথা ঈসা(আঃ) কে ঈশ্বর হিসেবে না মেনে শুধু মাত্র ঈশ্বরের দূত বা বার্তা বাহক হিসেবে মেনে ছিলেন, যা মোটামুটি পুরোটাই সামঞ্জস্যপূর্ণ ইসলামের সাথে।
সবশেষে, যে ঘোর অবিশ্বাসী লোকের সাথে সাজিদের সবসময় চলতো ঠাণ্ডা যুদ্ধ, সেই সাজিদকে সবসময় ‘মি. আইনস্টাইন’ বলে উপহাস করা তার শিক্ষক মুহাম্মদ মফিজুর রহমান, তার বিশ্বাসী শিবিরে প্রত্যাবর্তনের চেষ্টার লেখা চিঠি আপনাকে কাদাতে বাধ্য করতে পারে।
ইসলামের বিপরীতে ধেয়ে আসা সকল যুক্তির ভঙ্গুরতা, আর প্রশ্নগুলোর অবান্তরতা খুব সহজ-সরল ভাষায় তুলে ধরেছেন লেখক আরিফ আজাদ। পবিত্র কুরআনের অনন্যতা আর নবীজী (সাঃ) এর নব্যুওয়াতের সত্যতার উপর সব অকাট্য প্রমাণ এক জায়গায় করে মানুষের অন্তরে বইয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছেন এক বিশ্বাসের ফল্গুধারা।
Post a Comment